সাপ্তাহিক গণিত চিন্তা – ০০৩, এর সমাধান
সমাধান-
লিটুঃ কিরে কোথায় গিয়েছিলি? আমি না তোকে একটা অংক করতে দিয়েছিলাম?
মিতুঃ তোকে দুই তিন বার এসে ডেকেছি, কিন্তু তুই আমার কথা শুনিসনি। তুই কল্পনার জগতে ডুবে ছিলি। আমি গাছের পাতায় পাতায় ঘুরে বেড়াছিলাম।
লিটুঃ (হাসতে হাসতে) এটা আর নতুন কি। এখন অংকের উত্তর বল।
মিতুঃ এই যে উত্তর। উত্তরটা কি ঠিক হয়েছে?
লিটুঃ হ্যাঁ ঠিক আছে উত্তর। কোন সূত্র ব্যবহার করে সমষ্টির পার্থক্য বের করেছিস?
মিতুঃ আমি তো এটা করার সূত্র জানতাম না। অনেক কষ্ট করে একটা সূত্র তৈরি করে এটার সমাধান বের করেছি।
লিটুঃ কিভাবে করেছিস বুঝিয়ে বল।
মিতুঃ প্রথমে এই ৩ টি (৪১৮, ১২৫৪, ৭৫২৪০০) সংখ্যার গ.সা.গু করে পেয়েছি ৪১৮ আর ল.সা.গু করে পেয়েছি ৭৫২৪০০।
লিটুঃ ল.সা.গু, গ.সা.গু করার পর মজা পেয়েছিস নিশ্চয়?
মিতুঃ হুম। এর পর প্রশ্ন অনুযায়ী সমষ্টির পার্থক্য বের করতে যেয়ে দেখলাম এখানে অনেক গুলো জোড় এবং বিজোড় সংখ্যা আছে। যা যোগ করে বের করা সম্ভব হলেও অনেক সময় লাগবে। তখন আমি বিভিন্ন রকম সংখ্যা নিয়ে দেখলাম সূত্র তৈরি করা যায় কিনা।
এই যে দেখ-
১ থেকে ১০ এর মধ্যে,
জোড় সংখ্যা সমষ্টি = ২+৪+৬+৮+১০ = ৩০
বিজোড় সংখ্যা সমষ্টি = ১+৩+৫+৭+৯ = ২৫
সমষ্টির পার্থক্য ৩০ – ২৫ = ৫
তারপর ধর ১ থেক ১৬ মধ্যে,
২+৪+৬+৮+১০+১২+১৪+১৬ = ৭২
১+৩+৫+৭+৯+১১+১৩+১৫ = ৬৪
সমষ্টির পার্থক্য ৭২ – ৬৪ = ৮
এমন আরো কিছু সংখ্যা নিয়ে দেখলাম যে, যদি ১ থেকে শুরু হয় আর যদি শেষে জোড় সংখ্যা থাকে তাহলে ২ দিয়ে ভাগ করলে যা পায় সেটাই হলো সেই সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য। ১ থেক ২৬ এর মধ্যে জোড় এবং বিজোড় সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য ২৬ / ২ = ১৩।
বিশ্বাস না হলে জোড় এবং বিজোড় সংখ্যা গুলো যোগ করে পার্থক্য বের করে দেখ।
লিটুঃ আমি জানি এটা। আর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছিস তুই জোড় আর বিজোড় সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য যত তাদের মধ্যে তত গুলোই জোড় সংখ্যা আছে আর ঠিক তত গুলোই বিজোড় সংখ্যা আছে?
মিতুঃ হ্যাঁ দেখেছি। আমি তারপর আরো কিছু সংখ্যা নিয়ে হিসাব করলাম।
যেমনঃ ১১ থেকে ২৪,
১১+১৩+১৫+১৭+১৯+২১+২৩ = ১১৯
১২+১৪+১৬+১৮+২০+২২+২৪ = ১২৬
এখানে সমষ্টির পার্থক্য (১২৬ – ১১৯ ) = ৭ এবং এখানেও জোড় সংখ্যা এবং বিজোড় সংখ্যা ৭ টা করে আছে।
লিটুঃ হ্যাঁ। কিন্তু এখানে তো আর ২৪/২ করলে উত্তর পাবিনা।
মিতুঃ হুম, ২৪ কে ২ ভাগ করলে, ১ থেকে ২৪ এর মধ্যের জোড় এবং বিজোড় সংখ্যা সমষ্টির পার্থক্য পাওয়া যাবে। সেই জন্য আমি ভাবলাম যদি আমি ১ থেকে ২৪ মধ্যের সমষ্টির পার্থক্য থেকে ১ থেকে ১০ এর সমষ্টির পার্থক্য বাদ দেয় তাহলে কি হবে। তারপর, আমি করে দেখলাম এবং এটা কাজ করল।
১ থকে ২৪ এর জোড় এবং বিজোড় সংখ্যা সমষ্টির পার্থক্য ১২।
১ থকে ১০ এর জোড় এবং বিজোড় সংখ্যা সমষ্টির পার্থক্য ৫।
১২ থেকে ৫ বাদ দিয়ে ৭ পেলাম। আর সেটাই হলো ১১ থেকে ২৪ এর জোড় এবং বিজোড় সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য।
যদি আমরা ১১ কে L ধরি, আর ২৪ কে R ধরি, তাহলে এটাকে গাণিতিক বাক্যে লিখলে এমন হয়,
(R / 2) – ((L – 1) / 2))
= (24 / 2) – ((11-1) / 2)
= 12 – (10 / 2)
= 12 – 5
= 7
লিটুঃ হুম বুঝলাম। কিন্তু এই সূত্র টা কি কাজ করবে ১০ থেকে ২৪ এর মধ্যের জোড় এবং বিজোড় সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য বের করতে।
মিতুঃ না।। উপরের ঐ সূত্র টার ক্ষেত্রে L যদি বিজোড় আর R যদি জোড় সংখ্যা হয় তাহলেই কাজ করবে। কারণ সেখানে সমান সংখ্যক জোড় আর সমান সংখ্যক বিজোড় সংখ্যা আছে। কিন্তু ১০ থেকে ২৪ এর মধ্যে একটা জোড় সংখ্যা বেশি আছে।
১০+১২+১৪+১৬+১৮+২০+২২+২৪ = ১৩৬
১১+১৩+১৫+১৭+১৯+২১+২৩ = ১১৯
এখানে সমষ্টির পার্থক্য ১৭। আমরা এর আগে দেখেছি ১১ থেকে ২৪ এর ক্ষেত্রে পার্থক্য ৭ হই। আর ১০ থেকে ২৪ এর ক্ষেত্রে ৭+১০=১৭।
লিটুঃ তার মানে তুই বলতে চাচ্ছিস, যদি শুরুতে এবং শেষে জোড় সংখ্যা থাকে তাহলে শুরুর যেই সংখ্যা থাকে সেটা বাদ দিয়ে হিসাব করে পরে যোগ করলেই হবে।
মিতুঃ হ্যাঁ হবে, সেই ক্ষেত্রে সূত্র টা হবে,
(R / 2) – (L / 2) + L
= (24 / 2) – (10 / 2) + 10
= 12 – 5 + 10
= 17
বলতো, আগের সূত্রে (L-1) লিখেছিলাম এই বার কেন লিখিনি?
লিটুঃ এখানেও তুই আগের মতই হিসাব করেছিস ১ থেকে ২৪ এর জোড় এবং বিজোড় সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য থেকে ১ থেকে ১০ এর জোড় এবং বিজোড় সংখ্যার সমষ্টির পার্থক্য বাদ দিয়েছিস। আর যেহেতু আগে থেকেই এটা ১০ হয়ে আছে তাই এখানে ১ বাদ দেবার দরকার হয় নি।
মিটুঃ এই সূত্র অনুযায়ী তোর দেয়া অংকের উত্তরঃ
(৭৫২৪০০ / ২) – (৪১৮ / ২) + ৪১৮ = ৩৭৬৪০৯
লিটুঃ এতো গভীর ভাবে এই সাধারণ অংকটা ভাবার জন্য আমি সত্যি বেশ খুশি হয়েছি। আমি কিছু অংক সমাধান করতে পারছি না। ভাবছি তোর সাথে সেই গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
মিতুঃ (আনন্দের সাথে) আচ্ছা।
লিটুঃ আচ্ছা শুন-
১। প্রথমে বিজোড় সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়ে শেষে জোড় সংখ্যা হলে।
তোর সূত্র – “(R / 2) – ((L-1) / 2))” । এটাকে আরো ছোট করে “(R – (L – 1)) / 2” লিখা যায়।
২। প্রথমে জোড় সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়ে শেষেও জোড় সংখ্যা হলে।
তোর সূত্র – “(R / 2) – (L / 2) + L” । এটাকে আরো ছোট করে “(R – L) / 2 + L” অথবা “(R + L) / 2” লিখা যায়।
৩। প্রথমে জোড় সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়ে শেষে বিজোড় সংখ্যা হলে, সূত্র কি হবে?
৪। প্রথমে বিজোড় সংখ্যা দিয়ে শুরু হয়ে শেষেও বিজোড় সংখ্যা হলে, সূত্র কি হবে?
আমি, যেই সূত্র গুলোর কথা বললাম, সেই গুলো কিভাবে কাজ করে এবং ৩ আর ৪ নাম্বার এর সূত্র গুলো কি হবে একটু চিন্তা করিস।
মিতুঃ আচ্ছ, তবে এখন না।
সঠিক উত্তর দাতা দের নাম,
১। Asif – Chadpur
২। দোলন – Dhaka
৩। ফারজানা ফারিন – বগুড়া
৪। K M Rafi – Natore
